News Details
Political Violence In Bangladesh Sept, 2024 - Sept, 2025
২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহনের তের মাস অতিবাহিত হলেও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মানবাধিকার ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রত্যাশিত উন্নতি হয়নি । গণ-অভ্যুত্থানের তের মাস পরেও মানবাধিকার ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রকৃত অবস্থা উদ্বেগজনক। নতুন বছরে মানবাধিকার পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নের প্রত্যাশা থাকলেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের পূর্বের ধারা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি এতে নতুন কিছু ধারাও যুক্ত হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহনের তের মাসের (সেপ্টেম্বর’২৪-সেপ্টেম্বর’২৫) মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, গুম ও ক্রসফায়ারের মতো ঘটনা না ঘটলেও রাজনৈতিক সহিংসতা, মব সহিংসতা, গণপিটুনিতে নির্যাতন ও হত্যা, নারী নিপীড়ণ ও ধর্ষণ, মাজারে হামলা ও ভাঙচুর এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ও নির্যাতনে মৃত্যু, শ্রমিকদের উপর হামলা, শিশু নির্যাতন, সংখ্যালঘু নির্যাতন, কারাগারে মৃত্যু, সভা-সমাবেশে বাধা প্রদানের ঘটনা ঘটেছে। এসময়ে চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, ও হত্যাসহ বেশ কিছু সামাজিক অপরাধ ঘটেছে যা জনমনে ভয় ও আতঙ্ক তৈরি করেছে। সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার বক্তব্য নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ৫, ৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি, শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদন এবং সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের অফিস ও নেতাদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। গত ১২ মে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গত বছর আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সব সংগঠনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে উত্তেজনা ও সংঘর্ষ শিক্ষার্থীদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। আদালত ও কারা ফটকে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের উপর হামলা; থানা ও পুলিশের ওপর হামলা করে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টদের আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে, যেখানে রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে । দেশে সন্ত্রাসবাদ দমন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে ও বিশেষ অভিযানে বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ১৬ জুলাই, ২০২৫ তারিখে গোপালগঞ্জে এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি কেন্দ্রিক স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে যৌথ বাহিনীর সংঘর্ষে ও গুলিতে ৫ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন। ৯ জুলাই ২০২৫ তারিখে পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (মিটফোর্ড) সামনে জনসম্মুখে ব্যবসায়ী ও যুবদল কর্মী মোঃ সোহাগকে তার দলের লোকেরা যেভাবে নির্মমভাবে পিটিয়ে, কুপিয়ে এবং শরীর থেঁতলে হত্যা করেছে—সেটা ছিল অত্যন্ত বর্বর, ভীতিকর এবং উদ্বেগজনক।
১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২-এ শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বেশ কয়েকজন হেনস্থা ও গনপিটুনির শিকার হয়েছেন। ২৯ আগস্ট রাজধানীর কাকরাইল বিজয়নগরে জাতীয় পার্টি কার্যালয়ের সামনে গণঅধিকার পরিষদের সাথে জাতীয় পার্টির সংঘর্ষের পর গণঅধিকার পরিষদের কর্মসূচিতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হামলায় সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। এই ঘটনার জেরে ৩০ আগস্ট রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এছাড়াও দেশের কয়েকটি জেলায় জাতীয় পার্টির অফিসে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
